বৃহস্পতিবার, ১১ জুন, ২০১৫
মিথ্যা বলার অধিকার ও অন্যান্য - মুহম্মদ জাফর ইকবাল
লেখকেরা তাদের কথাসাহিত্যের মাধ্যমে যা বলেন বা বলতে চান, তা শেষ পর্যন্ত আসলে সম্পূর্ণরুপে তাদের কথা থাকে না। সেগুলো হয়ে ওঠে কোন নির্দিষ্ট চরিত্রের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য। ফলে লেখকের গল্প-উপন্যাস পড়ে কোন লেখকের মনের তল খুঁজে পাওয়া আপাত দৃষ্টিতে অসম্ভব। কিন্তু সেই কাজটা সম্ভব হতে পারে সাম্প্রতিক ঘটনা সম্পর্কে লেখক যদি স্বপ্রণোদিত হয়ে নিজের মতামত ব্যক্ত করতে বা প্রকাশ করতে চান। আজকাল একাধিক পত্রিকায় কলাম লেখার মাধ্যমে ঠিক সেই কাজটিই করছেন স্যার মুহম্মদ জাফর ইকবাল। তাই তার চিন্তা চেতনার অংশীদার হওয়াটা তার সকল পাঠক কিংবা অনুসারি ছাত্রের নিকট সহজ হয়ে উঠছে। বর্তমানের প্রধান প্রধান আলোচনার বিষয়বস্তুকে স্যার নিজের মত করে ব্যবচ্ছেদ করছেন তার কলামগুলোতে। আর তাই তো পাঠক সম্যক ধারণা লাভ করছে বিভিন্ন প্রেক্ষাপটে স্যারের অবস্থান, অভিব্যক্তি ও সর্বোপরি মানসিকতার।
২০১৩ সালজুড়ে ঠিক এমনই বেশ কয়েকটি কলাম লিখেছেন স্যার। একটা পত্রিকায় নয়, একাধিক পত্রিকায়। তাই যারা নিয়মিত পত্রিকা পড়ে, তাদের স্যারের সেসব লেখার সাথে নিশ্চিতভাবেই পরিচয় আছে। তবে যাদের পরিচয় আছে আর যাদের নেই, তাদের সকলের জন্যই কিন্তু 'মিথ্যা বলার অধিকার ও অন্যান্য' দারুণ লোভনীয় একটি বই হিসেবে বিবেচিত হতে পারে।
প্রথমত, যারা কলামগুলো আগে পড়েনি তারা এখন এক বইয়ে, দুই মলাটের ভিতর কলামগুলো পেয়ে যাবে আর পড়ে নিতে পারবে। তবে লাভবান হবে মূলত তারাই, যারা কলামগুলো আগেও পড়েছে। একে তো তারা সঠিক সময়ে স্যারের সঠিক বক্তব্য ও দিক নির্দেশনার সাক্ষী হতে পেরেছেই, এখন আবারো আলোচ্য বইটির মাধ্যমে সেগুলোর সংকলনকে সংগ্রহে রাখার সুযোগ পাবে। তাছাড়া কলামগুলো এখন বাসি হয়ে গেলেও এর মূল্যমান কিন্তু কমে নাই। হয়ত প্রেক্ষাপট পুরনো হয়ে গেছে তবু সে সময়ে স্যারের চিন্তা চেতনা আর বর্তমানের নানা ঘটনার সাথে স্যারের বর্তমান কলামগুলোর বক্তব্য যদি কেউ মিলিয়ে দেখতে চায়, তবে অবশ্যই তারা স্যারের ব্যক্তিত্বকে আরেকটু কাছ থেকে পর্যবেক্ষনের সুযোগ পাবে। তাই স্যারের একনিষ্ঠ পাঠকদের উচিৎ হবে না এই বই পড়ার সুযোগ হাতছাড়া করা।
এবার আসা যাক বইতে কি আছে, তার ব্যাপারে। ঐ তো, যা বললাম এতক্ষণ, ঠিক তাই। ২০১৩ এর প্রধান প্রধান আলোচিত ঘটনা সম্পর্কিত স্যারের কলামগুলোর দেখা মিলবে। প্রধানত দেখা পাওয়া যাবে শাহবাগে তরুণ প্রজন্মের গণজাগরণ মঞ্চ সম্পর্কে স্যারের নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গির বহিঃপ্রকাশ। যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের রায় যাতে হয়, এটা স্যার কতখানি ব্যাকুলভাবে চান, তাও আবারো প্রমাণ হবে কলামগুলোর মাধ্যমে। দেশ কোনদিকে চলছে, দেশের মানুষের কি অবস্থা এসব বিষয়েও স্যারের ব্যক্তিগত মতামত ফুটে উঠবে। স্যারের বিদেশ ভ্রমণ ও অতঃপর দেশের পরিস্থিতির সাথে সেই ভ্রমণের প্রাসংগিকতা বা বিশ্ববিদ্যালয়ে যৌথ ভর্তির পক্ষে স্যারের সোচ্চার অবস্থান, সবকিছুই দুই মলাটে পাবে পাঠকেরা 'মিথ্যা বলার অধিকার ও অন্যান্য' বইটির মাধ্যমে।
0 Responses to “মিথ্যা বলার অধিকার ও অন্যান্য - মুহম্মদ জাফর ইকবাল”
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন