বৃহস্পতিবার, ১১ জুন, ২০১৫
আরো একটু খানি বিজ্ঞান - মুহম্মদ জাফর ইকবাল
১৮১৩ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে চার্লস রেডহেফার নামে একজন মানুষ একটা যন্ত্র (“চির ঘূর্ণায়মান’’ অফুরন্ত শক্তির ইঞ্জিনের মডেল) তৈরি করেছিল যেটা নিজে থেকেই ঘুরত। অনেক মানুষ সেটা পয়সা খরচ করে দেখতে এসেছিল এবং রেডহেফার সাহেব রীতিমতো বড়লোক হয়ে গিয়েছিলেন। কিন্তু পদার্থবিজ্ঞান থেকে আমরা জানি, কোন যন্ত্রে যতটুকু শক্তি দেওয়া হয় তার থেকে অনেক কম শক্তি পাওয়া যায় কারণ শক্তিকে ব্যবহার করলেই তার খানিকটা অপচয় হয়, সেজন্য কখনোই ‘অফুরন্ত শক্তি’ বা ‘চির ঘূর্ণায়মান’ যন্ত্র তৈরি করা যায় না। শেষ পর্যন্ত কিছু সন্দেহপ্রবণ মানুষ কাঠের কিছু তক্তা খুলে দেখতে পেলেন একাধিক পুলি ব্যবহার করে ছাদে বসে একটা বুড়ো মানুষ সেটা দর্শকদের জন্য ঘুরিয়ে যাচ্ছে।
চমৎকার এই তথ্যটি মুহম্মদ জাফর ইকবাল রচিত ‘আরো একটুখানি বিজ্ঞান’ গ্রন্থ থেকে আপনাদের সামনে তুলে ধরলাম। বিজ্ঞানের এই রকম মজাদার ও আকর্ষণীয় হাজারো তথ্য, গল্প, ঘটনা ও ছবি নিয়ে সাজানো হয়েছে বইটি। ‘কালি ও কলম’-এর প্রতি সংখ্যায় নিয়মিত বিজ্ঞান লেখক মুহম্মদ জাফর ইকবাল রচিত তিন বছরে প্রকাশিত লেখাগুলো সংকলন করে কাকলী প্রকাশনী থেকে ২০০৭ সালে একুশে বইমেলায় প্রকাশিত হয়েছিল ‘একটুখানি বিজ্ঞান’। এই বইটি প্রকাশের পর শ্রেষ্ঠ সৃজনশীল বই প্রকাশের জন্য কাকলী প্রকাশনী বাংলা একাডেমী পুরষ্কার লাভ করে। ‘একটুখানি বিজ্ঞান’ বইটির সাফল্যে অনুপ্রাণিত হয়ে ‘কালি ও কলম’-এ পরবর্তী তিন বছরে প্রকাশিত লেখাগুলো সংকলন করে ২০১০ সালের ফেব্রুয়ারিতে প্রকাশিত হয় ‘আরো একটুখানি বিজ্ঞান’। বইটির প্রচ্ছদ করেছেন ধ্রুব এষ।
বইটি সর্বমোট ৩১টি বিষয় নিয়ে সাজানো হয়েছে। এদের মধ্যে রয়েছে বিজ্ঞানীদের জীবনী, প্রযুক্তি, পদার্থবিজ্ঞান, রসায়ন, উদ্ভিদবিজ্ঞান, প্রাণিজগৎ, মনোবিজ্ঞান, আবহাওয়া ও পরিবেশ, সৌরজগৎ ও জ্যোতির্বিদ্যা।
বইটিতে উঠে এসেছে একজন তুখোড় গণিতবিদ, সফল পদার্থবিজ্ঞানী, প্রতিভাময় জ্যোতির্বিদ, নিউপ্লেটোনিক দর্শন ধারার প্রধান ও আলেকজান্দ্রিয়া লাইব্রেরির শেষ গবেষক হাইপেশিয়া-এর করুণ জীবনকাহিনী; ম্যাক্স প্লাংকের সূত্রকে সঠিক যুক্তির উপর দাঁড়া করিয়েছিলেন যিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তরুণ বিজ্ঞানী সত্যেন্দ্রনাথ বসু, যার নামে বোজনের নামকরণ করা হয়েছে, রয়েছে তাঁর জীবনী। আরো আছে বিজ্ঞানী জগদীশচন্দ্র বসু’র চমকপ্রদ জীবনকাহিনী। ১৯৯৮ সালে IEEE(Institute of Electrical SPamp Electronic Engineering) স্বীকার করে নেয়, রেডিওর আবিষ্কারক এককভাবে মার্কোনি নন, রেডিওর আবিষ্কারক একই সাথে আমাদের মুন্সীগঞ্জের বাঙালি বিজ্ঞানী জগদীশচন্দ্র বসু।
প্রযুক্তি বিষয়ে রয়েছে ন্যানোটেক ও নিউক্লিয়ার শক্তি কেন্দ্র; রসায়নে আছে কার্বন-ডাই-অক্সাইডঃ পৃথিবীর ভিলেন?, একটি বিস্মরকর বস্তুঃ কাচ নিয়ে তথ্যবহুল রচনা। জ্যোতির্বিজ্ঞানপ্রেমীদের জন্য রয়েছে প্লুটো কেন গ্রহ নয়, পৃথিবীর মানুষ ও আকাশের চাঁদ, সূর্যগ্রহণ ও একজন সুপার স্টার, ‘অতিকায় হীরক খণ্ড’ নামক চারটি আকর্ষণীয় রচনা।
0 Responses to “আরো একটু খানি বিজ্ঞান - মুহম্মদ জাফর ইকবাল”
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন