বৃহস্পতিবার, ১১ জুন, ২০১৫
প্রেত - মুহম্মদ জাফর ইকবাল
রুমি অত্যন্ত সাধারণ ঘরের ছেলে কিংবা বলা যায় সাধারণেরও নিচে। রুমির জীবনটা খুব সহজ ছিলো যতদিন না সে ঢাকায় এসেছিল। সহজ বলতে গোলমেলে ছিল না। তবে কষ্টের ছিল। রুমি বলতে গেলে অনাথ ছিলো। বাবা খুন হয়ে যায় ছোটবেলায় সেই থেকে মা অপ্রকিতস্থ হয়ে নিজের বাপের বাড়ি ফিরে যেয়ে অন্যত্র বিয়ে করে ঘর সংসার করে। রুমি আর রুমির ছোট বোন্ শানুকে তাদের ফুপু এনে তোলে তার নিজের সংসারে ঢাকাতে। মূলত এই খানেই রুমির মূল যাত্রার শুরু। ফুপুর সংসারে কাজের ছেলে হয়েই থেকে যেতো যদি ফুপা তাকে পড়ার সুযোগ না দিতেন। অভাগা রুমি ছাত্র ভালো ছিলো। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হিন্দু বিদ্বেশী উদ্ভট অসহ্যকর চরিত্রের কিবরিয়া ভাইয়ের সাথে হঠাৎই পরিচয় হয়। ঘনিষ্টতা বাড়ে তাকে যখন বলির পাঠার মত ধরে নিয়ে যেয়ে কতগুলো শয়তানের উপাসকরা তাদের কাজ শেষে তাকে প্রায় খুন করে ফেলেছিলো যদি সে পালাতে সফল না হতো তখন সেখান থেকে যখন হাসপাতালে চোখ খুলে প্রথম এই কিবরিয়া ভাইকেই দেখতে পায়। জ্যোতিষী জোয়ারদারের কবলে নেহাৎ কৌতুহল মেটাতে যেয়ে পরেছিল। সেখান থেকে ইভার মত কালনাগিনীর রূপের খপ্পরে পরে প্রায় মরতে বসেছিল। কিন্তু মানুষ মরিয়া হয়ে গেলে অনেক অসম্ভবকেই সম্ভব করে। রুমির সেই কালো রাতে পালিয়ে বেচে আসাটাই অস্বাভাবিক ছিলো। বিভিন্ন ড্রাগের প্রয়োগের কারণে তার মস্তিস্কের সার্জারী প্রয়োজন হয়। সাময়িক ভাবে সে কিছু স্মৃতি হারায়। কিন্তু এর পরেই সে তের পাওয়া শুরু করে যে সে আর আগের মত নেই। সে মানুষের মনের কথা শুনতে পাচ্ছে। ভড়কে যায় রুমি। এর থেকে কিভাবে মুক্তি পাবে ভেবে ভেবে হয়রান হয়ে একরকম মানুষের সাথে মেলামেশা বন্ধ করে দেয়। সে টের পায় লুসিফার তার ভেতর থেকে একেবারে মুছে যায়নি সে আতঙ্কিত হয়ে নিজেকে প্রায় গৃহবন্দী করে ফেলে। ঠিক তখনই কয়েকটি দুর্ঘটনার পর কিবরিয়া ভাই তাকে মানসিক চিকিত্সকের কাছে নিয়ে যায়। খুব একটা কাজ হয়না স্রেফ ঘুমের ওষুধ খেয়ে ঘুমানো। এর মধ্যে এক বার মত লোকের সাথে রুমি যখন দিশেহারা তখন রাস্তায় দেখা হয়। বৃদ্ধ তাকে শান্ত হবার পরামর্শ দেয় এবং এও বলে যে তার মাঝে যেই শক্তি আছে তাতে ভয় পাবার কিছু নেই। সে যদি ভয় পায় তাহলে এই শক্তিকে সে নিয়ন্ত্রণে নিতে পারবে না। তারপর রুমিকে একটি কাজ দিয়ে এক জায়গায় পাঠায় যেখানে তার আসা যাওয়াতে কয়েদিন সময় লাগে কিন্তু ফেরত আসার পর রুমি নিজেকে অনেক সুস্থ হিসেবে ফিরে পায়। একবার সে ইভার প্রতি আকৃষ্ট হয়ে জীবনের মত গোলমাল হয়ে যায় তাই এসব থেকে দুরেই ছিল কিন্তু জীবনে আবার ভালবাসা উকি দেয় রুমির। ক্লাসের একটি মেয়েকে হঠাৎই ভালোবেসে ফেলে কিন্তু তা প্রকাশের আগেই মেয়েটির বিয়ে হয়ে যায়। সাংঘাতিক কষ্ট পায় রুমি। এর পর আসল ঘটনার শুরু। প্রথমে শহরে শিশুদের মৃত দেহ পাওয়াটা একটা বিচ্ছিন্ন ঘটনা বলেই ধরে নিয়েছিল সবাই কিন্তু এর পর যখন একের পর এক শিশু অপহরণ তারপর কিছুদিনের মধ্যে তাদের নৃসংশ ভাবে খুন করা লাশ পাওয়া যাচ্ছিল তখন পুলিশ থেকে শুরু করে সাধারণ জনগণও সতর্ক হয়ে গেল এই সিরিয়াল কিলারের ব্যাপারে। খুনি যখন শিকারের খোজে ঘুরে বেড়াচ্ছে তখন রুমির সাথে ৩ বছর আগে এক দুর্ঘটনায় হাজতবাসের ঘটনায় পরিচিত এক পুলিস অফিসার তার কাছে ধর্না দিল এই খুনিকে ধরতে তাদের সাহায্যের জন্য। রুমি যদিও ভয় পাচ্ছিল আবার সেই অন্ধকারের জগতের সাথে যোগাযোগের কিন্তু এবার কতগুলো অসহায় শিশুর জীবন তার হাতে। সপে দিল নিজেকে ভাগ্যের হাতে। শেষ পর্যন্ত বিজয় হলো রুমির কিন্তু অতিরিক্ত মানসিক স্ট্রেনের কারণে দ্বিতীয় অস্ত্রপচার প্রয়োজন হয়। আর শেষ পর্যন্ত তার মস্তিষ্কের এক অংশ পুরোপুরি ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে সে সব কিছু ভুলে যায়।
0 Responses to “প্রেত - মুহম্মদ জাফর ইকবাল”
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন