বৃহস্পতিবার, ১১ জুন, ২০১৫
পদার্থবিজ্ঞানের প্রথম পাঠ - মুহম্মদ জাফর ইকবাল
বৃহস্পতিবার, ১১ জুন, ২০১৫ by Usama Yousuf
ভূমিকা
আমি বহুকাল থেকে পদার্থবিজ্ঞানের একটা পাঠ্যবই লিখতে চেয়েছিলাম। আজ আমার সেই স্বপ্ন পূরণ হযেছে। বইটি লেখা শেষ হযেছে, তবে এ ধরনের বই কখনো শেষ হয় না। প্রতি বছর বইয়ের পরিবর্তন হয়, নূতন বিষয় সংযোজন হয, কাজেই এই বইটির বেলায়ও তা-ই হবে। প্রতি বছর এর একটু পরিবর্তন হবে, একটু নূতন কিছু যোগ হবে।
এটি নবম-দশম শ্রেণির ছেলেমেয়েদের জন্য লেখা। এই বিষয়ে ছেলে মেয়েদের পদার্থবিজ্ঞান শেখার জন্য কি কি পড়া উচিত, সে বিষয়ে আমার নিজস্ব চিন্তাভাবনা আছে; কিন্ত বইটি লেখার সময় আমি আমার চিন্তাভাবনাকে বাক্সবন্দি করে তাদের যে পাঠ্য বইটি আছে, সে বইটির বিষয়গুলোর মাঝে সীমাবদ্ধ রেখেছি। সেই বইয়ে যা ছিল তার প্রায় সব কোন না কোনভাবে এই বইয়ের আছে, কিছু কিছু জায়গায় এর চেয়ে বেশি আছে । পদার্থবিজ্ঞানের অনেক সহজ বিষয় নবম- দশম শ্রেণির ছেলেমেয়েরা বুঝতে পারে না বলে তাদের কাছ থেকে আড়াল করে রাখা হয়। আমি আড়াল করে রাখেনি - উদারভাবে কিছু কিছু উদাহরণ হিসেবে ঢুকিয়ে দিয়েছি।
তবে কোন ছেলেমেয়ে যেন ভুলেও মনে না করে যে এটি পড়ে তারা পরীক্ষার ভাল নম্বর পাবে। এটি মোটেও পরীক্ষার ভাল নাম্বার পাবার জন্য লেখা হয়নি- এটি লেখা হয়েছে পদার্থবিজ্ঞান ভাল শেখার জন্য । আমি আমার মতো করে বিষয়গুলো বোঝানোর চেষ্টা করেছি। নিজ হাতে প্রতিটি ছবি এঁকে অনেক উদাহরণ দিয়ে বিষয় গুলো সহজ করার চেষ্টা করেছি।
তবে আসল পাঠ্যবইয়ের সাথে এখানে একটা বড় পার্থক্য রয়েছে। ঠিক কি কারণ জানা নেই , আমাদের পাঠ্যবইয়ের রাশিগুলোকে বাংলায় অনুবাদ করে ফেলা হয়। ইলেকট্রনকে আমি ইলেকট্রন বলি তবে চার্জকে কেন আধান বলি , সেটা আমার কাছে একটা বড় রহস্য । । সবচেয়ে বড় কথা, এখানে যে ছেলেমেয়েটি চার্জকে আধান বলতে শিখেছে- দুই বছর পর সে যখন কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে পদাথবিজ্ঞান শিখবে তখন কিন্তু তাকে সেটাই চার্জ বলতে হবে। তাহলে কেন মাত্র কয়েক বছরের জন্য শুধু শুধু একটা বিচিত্র শব্দ শিখতে হবে ?
কাজেই এ্ বইয়ে আমি পদার্থবিজ্ঞানের রাশিগুলোর যে নামে তাদের পরিচিতি হওয়া উচিত . সে নাম গুলোই ব্যবহার করেছি। ব্র্যাকেটে মাঝে মাঝে বিচিত্র নাম দিয়ে রেখেছি যেন ছেলেমেয়েরা জানে, কোনটা কি? ইংরেজি চার্জকে বলা হয় আধান লেখায় তবু জোড় করে হয়তো একটা যুক্তি দাঁড় করানো যায় কিন্তু আয়নার মতো চমৎকার বাংলা শব্দকে কেন দর্পন বলা হবে। সেটি আমার মাথায় কিছুতেই ঢুকেনি- কোনোদিনও ঢুকবেও না।
এখানে সবাইকে একটা জিনিসি মনে করিয়ে দিই। পর্দাথবিজ্ঞান শেখা্ মানে নয় কিছু সংজ্ঞা মুখস্থ করা। পদার্থবিজ্ঞান শেখা মানে সমস্যার সমাধান করতে পারা। এই বইযে অনেকগুলো সমস্যা উদাহরণ হিসেবে দেয়া আছে। তাই কারো যদি পদার্থবিজ্ঞান শেখার ইচ্ছা হয় তাদরেকে এই উদাহরণগুলো প্রথমে নিজে নিজে করার চেষ্টা করতে হবে। বইয়ের শেষে যে অনুশীলনী আছে সেগুলো সবাইকে করতে হবে। শুধু তাহলেই মনে করবে পুরো বইটা পড়া হয়েছে।
এই বইটা লেখা্র সময় আমি আমার নিজের শেখা থিওরি অব রিলেটিভিটি, কোয়ান্টাম মেকানিক্স, একটুখানি বিজ্ঞান এবং আরো একটুখানি বইগুলো থেকে কিছু অংশ ব্যবহার করেছি। বইয়ের কিছু অনুশীলনী তৈরি করার জন্য David Halliday এবং Robert Resnick এর লেখা আমার প্রিয় পদার্থবিজ্ঞানের বই Physics থেকে সাহায্য নিয়েছি। যারা বইটি লিখতে সাহায্য করেছে, উৎসাহ দিয়েছে তাদের জন্য কৃতজ্ঞতা। বিশেষ করে কৃতজ্ঞতা জানাই আমার অচেনা ইন্টারনেট পাঠকদের যারা নিজেরা এগিয়ে এসে ভুল কিংবা অসংগতিগুলো আমাকে দেখিয়ে দিয়েছি। যদি একজন মানুষের কথা আলাদা করে বলতে হয় তাহলে সে মানুষটি হবে আমার সকল কাজের সহয়োগী মোহাম্মাদ জয়নাল আবেদীন, তার সাহয্য ছাড়া এই বইটা কোনদিনও শেষ হতো না।
এই বইটা একটা এক্সপেরিমেন্ট, যদি দেখা যায় এই ইক্সপেরিমন্ট ঠিক ঠিক কাজ করেছে তাহলে পরের এক্সপেরিমেন্টগুলো শুরু করে দেয়া হবে ।
মুহম্মদ জাফর ইকবাল
শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, সিলেট।
Tags: বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি , মুহম্মদ জাফর ইকবাল
এতে সদস্যতা:
মন্তব্যগুলি পোস্ট করুন (Atom)
0 Responses to “পদার্থবিজ্ঞানের প্রথম পাঠ - মুহম্মদ জাফর ইকবাল”
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন