শুক্রবার, ১৯ জুন, ২০১৫

জীবন ও রাজনৈতিক বাস্তবতা - শহীদুল জহির

71.1 (1)শহীদুল জহিরের প্রথম উপন্যাস “জীবন ও রাজনৈতিক বাস্তবতা”-কে হয়তো মুক্তিযুদ্ধের উপন্যাস হিশেবে চিহ্নিত করা যায় না, কিন্তু মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তী সময়ে স্বাধীনতাবিরোধী কু-শক্তির উথানের সাথে একজন একজন বোনহারা ভাই কিংবা যুদ্ধের ভেতর দিয়ে যাওয়া ভয়াবহ সময়ের একজন মানুষ ও তাঁর পরবর্তী স্বাধীনতা বিরোধী শক্তির মাথাচাড়া দেয়ার প্রত্যক্ষ দর্শকের মনস্তত্ত্ব নিয়েই এই উপন্যাস। যুদ্ধের বিবরণের চেয়ে যুদ্ধের মনস্তত্ত্ব- মহীবুল আজিজ তাঁর লেখায় উল্লিখিত উপন্যাস সম্পর্কে এ-মতই ব্যক্ত করেছেন। একটা মহল্লার প্রেক্ষাপটে তিনি যেভাবে পুরো যুদ্ধের ধ্বংসলীলা এবং যুদ্ধকালীন সব ধরণের মানুষের মানসিক ক্রিয়ার সচল উপস্থাপন করেছেন, তাতে তিনি শতভাগ সাফল্য অর্জন করেছেন বলে আমার বিশ্বাস। বাঙলা সাহিত্যে ভিন্ন ধারার লেখক নামে যে কয়জন শ্রদ্ধেয় সাহিত্যিক নীরবে আসন গেঁড়ে বসেছেন, তাঁদের মধ্যে শহীদুল জহির অগ্রগামী- সেটা হোক তাঁর নতুনতর ভাষাশৈলী কারণে, আর পরাবাস্তবতা, জাদুবাস্তবতা ব্যবহারে একজন সফল সাহিত্যিক হিশেবে। তাঁর উপন্যাস পড়তে গেলে নতুন পাঠকদের বরাবরই একটু হোঁচট খেতে হয়, একটু হয়তো ধাঁধায় পড়ে যেতে হয়- কিন্তু যখন আস্তে আস্তে আমরা প্রবেশ করি তাঁর রচনার ভেতরে, তিনি এক অদ্ভুত সম্মোহনী শক্তি দ্বারা আচ্ছন্ন করে রাখেন। বাঙলা সাহিত্যে তাঁর যদি তাঁর পূর্বসরী খুঁজে বের করার প্রয়াস চালানো হয়, তাহলে বোধহয় সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ এবং আখতারুজ্জামান ইলিয়াসের কথাই সর্বপ্রথমে আসবে। এদের দু’জনের মধ্যেও শহীদুল জহিরের ওপর প্রভাব ওয়ালীউল্লাহ’র বেশী, আর ওয়ালীউল্লাহই হয়তোবা প্রথম ব্যক্তির মধ্য দিয়ে সমাজের প্রসঙ্গটি দেখনোর চেষ্টা করেছিলেন এবং সেই বৈশিষ্ট্যটা “জীবন ও রাজনৈতিক বাস্তবতা” বইয়ের ভেতর দিয়েও মূর্ত হয়ে উঠেছে।

উপন্যাসটির প্রেক্ষাপট ১৯৮৫ সালের এবং উপন্যাসটি প্রথম প্রকাশিত হয় ১৯৮৮ সালে, সে দশকে যখন প্রতিষ্ঠিত স্বাধীনতাবিরোধীরা আবার নিজেদের আসন প্রতিষ্ঠা করছে এই দেশে। লেখক তাঁর এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, সেই দশকের অস্থিরতা থেকেই তিনি উপন্যাসটি লেখার তাগিদ অনুভব করেন। সেই সময়ের উদ্দেশ্যে কি কবি শামসুর রাহমান লিখেছিলেন,


ভোরবেলায় ঘন
কুয়াশার তাঁবুতে আচ্ছন্ন চোখ কিছুটা আটকে গেল তার
মনে হয় সে যেন উঠেছে জেগে সুদূর বিদেশে
যেখানে এখন কেউ কারো চেনা নয়, কেউ কারো
ভাষা ব্যবহার আদৌ বোঝে না; দেখে সে
উদ্ভট উটের পিঠে চলেছে স্বদেশ বিরানায়; মুক্তিযুদ্ধ,
হায়, বৃথা যায়, বৃথা যায়, বৃথা যায়।

শহীদুল জহিরের লেখার তরিকা অদ্ভুত, গল্পের ভেতরে তিনি চলাচল করেন অনায়াসে, একটা সময়কে উপজীব্য করে ঘুরেফিরে বেড়ান নানা সময়ে। আবদুল মজিদ নামের একজন ব্যক্তির দ্বারা উপন্যাসটি সূচনা, যার পায়ের স্যান্ডেল প্রাণের এক অন্তর্গত কারণে ছিন্ন হয়ে যায়- অতঃপর যে কারণে তিনি কিছুক্ষণ পরে তাঁর অস্তিত্ব নিয়ে সন্দিহান হয়ে পড়েন। কেন সন্দিহান হন, অথবা লেখকের ভাষায়- “আবদুল মজিদের অস্তিত্ব পুনর্বার ভেঙে পড়তে চায়”- এটাই সম্ভবত উপন্যাসের প্রস্তাবনা, যার জন্য তিনি পুরো একান্ন পৃষ্ঠার একটা ক্ষুদ্র অথচ গভীর রঙের দুঃখ, হতাশা, স্বপ্নভঙ্গ আর নতুন স্বপ্নের প্রতিজ্ঞার চিত্র একে যান নিরবচ্ছিন্নভাবে। বর্ণনা করার সুবিধার জন্যে বলা যায়, আসলে উপন্যাসটা শুরু হয়েছে ২২ পৃষ্ঠা থেকে, যখন আমরা জানতে পারি বদু মওলানার ছোট ছেলে যখন তাঁর বাবার সমর্থিত দলের পুনরায় প্রত্যাবর্তন করেন এবং হরতাল পালনে আবুল খায়ের, অর্থাৎ বদু মাওলানার ছোট ছেলে মহল্লার সবাইকে ধন্যবাদ জানান। নির্দোষ এই ধন্যবাদে কোন কালিমা নেই, কিন্তু দ্বিতীয় পৃষ্ঠাতেই- বদু বা আবুল খায়েরের আসল রূপ দেখিয়ে দেয় উপন্যাসিক। এখানে দ্রষ্টব্য, সেই হরতাল হচ্ছে আশির দশকের সেই উত্তল সময়ের সরকারবিরোধী হরতাল, যেখানে স্বাধীনতাবিরোধীদের সক্রিয় অবস্থানে পীড়িত ছিল পুরো দেশ, এবং পীড়িত আবদুল মজিদও।

মুক্তিযুদ্ধের সময় বদু মাওলানা যে বিরোধীশক্তির সহায়ক ছিলেন, তা পরিষ্কার হয়ে ওঠে যখন লেখক বলেন-


একাত্তর সনে বদু মাওলানা নরম করে হাসত আর বিকেলে কাক ওড়াত মহল্লার আকাশে। এক ঠ্যালা মাংস নিয়ে ছাদে উঠে হেত বদু মওলানা আর তার ছেলেরা। মহল্লায় তখনো যারা ছিল, তারা বলেছিল, বদু মওলানা যে মাংসের টুকরোগুলো আকাশে ছুড়ে দিত, সেগুলো ছিল মানুষের মাংস।

এই জায়গাতে এসেই আমরা বুঝতে পারি, কেন আবুল খায়েরের ভাষণে বিচলিত আবদুল মজিদ। মিলিটারিরা মহল্লায় আসার সাথে সাথে বদু হাত মেলায় মিলিটারিদের সাথে, এবং নয় মাস ধরে চালায় হত্যাযজ্ঞ এবং ধর্ষণ, যার শিকার মজিদের বোন মোমেনা। কাহিনীসূত্রে জানা যায়, বদুর নেতৃত্বে রাজাকারবাহিনী মহল্লা থেকে তুলসী এবং জবাফুলগাছ উপড়াতে গেলে মোমেনা বাঁধা দেয় এবং ধস্তাধস্তির এক পর্যায়ে এক রাজাকারকে চড় মেরে বসে। পরে তাকে আবিষ্কার করা হয় বধ্যভূমিতে।

বদু মওলানার যে নিখুঁত চরিত্র লেখক উপস্থাপন করেছেন, তা বাঙলা সাহিত্যে অনবদ্য সংযোজন। ৭১ এর বিরোধী শক্তিরা কীভাবে ব্যক্তিগত রেষারেষির কারণে মানুষ হত্যা করেছে, এবং নির্লজ্জভাবে মিলিটারিদের তোষামোদে বিগলিত ছিল- তাঁর জাজ্বল্য প্রমাণ এই উপন্যাস। পাকিস্তানী অফিসার দ্বিতীয়বারের মতো মহল্লায় এলে রাস্তার পাশে প্রশ্রাব করে বদু মওলানার পিঠে প্রশ্রাবে ভেজা হাত মুছে দিলে বদুর বিগলিত আচরণের যে চিত্র অংকন করেছেন, তা রাজাকারদের ঘৃণ্য চাটুকারিতার কুশ্রী রূপটা সার্থকভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন। লেখকের ভাষায়,


তারা মনে করেছিল, বোতাম লাগানোর সময় ক্যাপ্টেনের হাতে প্রশ্রাব লেগে যায় এবং সে তার ভেজা হাত নিজের পকেটে রুমাল না থাকায় বদু মওলানার পিঠের কাপড়ে মোছে। কিন্তু তারা পরে জেনেছিল যে তাকে ক্যাপ্টেন ছুঁয়েছিল এই ব্যাপারটির প্রতি সম্মান দেখানো এবং স্মৃতি ধরে রক্ষার জন্যেই সে তার জোব্বাটি সংরক্ষণ করেছিল।

এখানেই শেষ নয়। পাঠক আশ্চর্য হয়ে লক্ষ্য করেন, সাতজন মানুষকে মেরে কবর দেয়ার পর ভয়ে বিহব্বল মহল্লা যখন নিশ্চুপ, তখন আবুল খায়েরের কান্না শোনা যায় তার কুকুর ভুলুর মৃত্যুর কারণে!! উৎকণ্ঠিত বদু তখন ভুলুকে সমাহিত করে সে মৃতদের পাশে, যাদেরকে পাকবাহিনী হত্যা করেছে!! কী নির্মম সত্য, কিন্তু এই ছিল একাত্তরের বিয়োগগাঁথার বাস্তব দৃশ্যপট। বদু ঘোষণা করে, এই কবরে কোন পীর নাই, কুত্তা আছে। সাত সাতটি লাশের থেকে “কুত্তা” গুরুত্বপূর্ণ হয়ে যায় তার কাছে। সেই স্মরণে মজিদ লক্ষ্য করে, অপরাহ্ণের আকাশ উইপোকায় ছেয়ে আছে, এবং কাকের চিৎকারে তখন মনে হয় যেন নীরব সন্ত্রাস ছড়িয়ে পড়ছে। এই কাক হয়তো সেই কাক, যে কাক ৭১ এ বদু মওলানার ছাদের ওপর উড়ত মাংসের লোভে, এবং এখনো সেই কাক সব বদু মওলানার পকেটের আশ্রয় ছেড়ে বেরিয়ে আসছে বাইরে- সেই রুপকটি প্রতিস্থাপন করা হয়েছে।

স্বাধীনতাবিরোধীদের ধর্মের অপব্যবহার এবং তৎকালীন সময়ের ধর্মের অসাম্প্রদায়িক মনোভাবের একটা সামান্য কিন্ত শক্তিশালী চিত্র লক্ষ্য করা যায় উপন্যাসের বেশ কয়েকটি জায়গায়। প্রথমত, লেখকের বর্ণনাতে দেখা যায়, মায়ারানীর পুজার মণ্ড বিতরণের কাহিনী- যেখানে প্রাঙ্গনে অপেক্ষমাণ বালক বালিকাদের ধর্ম-বর্ণ-গোত্র নির্বিশেষে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির ব্যাপারটা তুলে ধরে, এবং দ্বিতীয়ত শহিদ মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ সেলিম আর মায়ারানীর অসমাপ্ত প্রেমকাহিনী শুধু প্রেমকাহিনী নয়, তা ছাপিয়ে হয়ে উঠেছে দুই ধর্মের মানুষের মিলনের উপজীব্য। খণ্ড এবং অসমাপ্ত প্রেমের ছাপটি আমাদের মনে বিষাদমাখা একটা পরিণতির দিকে এগিয়ে যায়, এবং মায়ারাণি ক্রমাগতভাবে থেকে যায় কুমারী।

মুক্তিযুদ্ধকালীন আরও কিছু খণ্ডচিত্র এসেছে এই উপন্যাসে। ধর্ষণ সম্পর্কে বলতে গিয়ে এমন ঘৃণার বাণ দিয়ে সুচারুভাবে সাজিয়েছেন তাঁর শব্দমালা- পড়ামাত্র সেই ঘৃণার রেশ ছড়িয়ে পরে পাঠকের মধ্যে। শহীদুল জহির লিখেছেন,


মহল্লার প্রতিটি বালক এবং বালিকার কাছে, পুরুষ এবং রমণীর কাছে যেন এই প্রথম উদঘটিত হয়েছিল যে, জগত সংসারে একটি ব্যাপার আছে, যাকে বলাৎকার বলে। তারা আজীবন যে দৃশ্য দেখে কিছু বোঝে নাই- যেখান একটা মোরগ তাড়িয়ে নিয়ে বেড়ায় মুরগিকে- মহল্লায় মিলিটারি আসার পর তাঁদের মনে হয়েছিল যে, প্রাঙ্গনের মুরগির মতো তার মা এবং কিশোরী কন্যাটি, পরিচিত ভালোবাসার স্ত্রী, তাদের চোখের সামনে প্রাণভয়ে এবং অনভিপ্রেত সহবাস এড়ানোর জন্যে ছুটে বেড়াচ্ছে। ব্যাপারটি এমন মর্মান্তিক তাদের জন্যে জানা থাকে যে, তাদের বিষণ্ণতা ছাড়া আর কোন বোধ হয় না।

অসহায়ত্বের কী শীতল উপস্থাপন। মানুষ যখন প্রতিরোধহীন, তখন সে কিছুই করতে পারে না নিয়তিকে আলিঙ্গন করা বাদে। সেই নিয়তি কতোটা ভয়াবহ আর নিষ্ঠুর- তাই ফুটে ওঠে। যেন, তাদের বিষণ্ণ লাগে কারণ, তাদের মনে হয় যে, একমাত্র মুরগির ভয় থাকে বলাৎকারের শিকার হওয়ার আর ছিল গুহাচারী আদিম মানবীদের। গুহাচারী আদিম মানবীরা বাস করতো গুহাচারী মানবের সাথে, কিন্তু একাত্তরেও সেই মানবের বংশধরেরা বেঁচে ছিল আশ্চর্যভাবে এবং তাদের অগণিত কুকর্মের পরও তারা আবারও আসন গেড়েছে, জাতির পতাকা আবার খামচে ধরেছে সেই পুরনো শকুন।

ঘটনাপ্রবাহ যদি মুক্তিযুদ্ধেই শেষ হয়ে যেত, তাহলে হয়তো আমরা একে মুক্তিযুদ্ধের উপন্যাস হিশেবে অভিহিত করতে পারতাম। কিন্তু মুক্তিযুদ্ধেই এই উপন্যাস শেষ হয় না, এবং হয়তো এই ঘটনাপ্রবাহ এখনো শেষ হয় নি। আজিজ পাঠান, সে ছিল মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্ব দানকারী দলের একজন নেতা- তা পরিষ্কার হয় যখন রাজাকারেরা তার বাসার নৌকাতে আগুন ধরিয়ে দেয়। যুদ্ধের সময় আজিজ পাঠান আত্মগোপন করে ছিল, এবং সে ফেরার পর মহল্লার মানুষ তাকে গ্রহণ করে আন্তরিকভাবে। অন্যদিকে বদু মওলানাকে কেউ গ্রহণ করে না, অমানুষিক ঘৃণায় এবং প্রতিবাদে মজিদের মা তাকে ধিক্কার দেয় এবং বলে “থুক দেই তোর মুখে।“ কিন্তু তাদেরই আবার মহল্লায় প্রত্যাবর্তন দেখে বিস্মিত হয়ে মজিদ যখন যায় আজিজ পাঠানের কাছে, তখন পাঠান তাকে বলেন, “রাজনীতিতে চিরদিনের বন্ধু অথবা চিরদিনের শত্রু বলে কেউ নেই”, তাই ভুলে যেতে বলে অতীতকে। তার জন্যেই হয়তো লেখক পাঠানের প্রত্যাবর্তনের সময় লিখেছিলেন, “কিন্তু পরবর্তী সময় ঘটনা এমন আকার নিয়ে ঘটে, যাতে করে মহল্লার লোকদের মনে হয় যেন বদু মওলানা, আজিজ পাঠানের সম্পত্তির জিম্মাদারি গ্রহণ করেছিল মাত্র”!!!! বদু যখন ফিরে আসে দুই বছর পর মহল্লায়, মোমেনার মা যখন অসীম ক্রোধ আর ঘৃণায় মুখে “থুক” দেয়ার কথা বলে, তখন নেতা আজিজ পাঠানই বদুকে সান্ত্বনা দেন, কাইন্দেন না বলে!!

তিনি আরও বলেন, তার নেতা যেহেতু বদু মওলানাদের মাফ করেছে, তার নিজের কোন প্রতিহিংসা নেই। আমরা এখন হয়তো অনেকেই জানি, মূল নির্দেশটি কী ছিল, কিন্তু তৎকালীন এই অপপ্রচারণার ভার সইতে হয়েছে, যার জন্যে এখন কড়ায় গণ্ডায় মাশুল দিতে হচ্ছে।

এই সুযোগ গ্রহণ করেই বদু কিংবা তার ছেলে আস্কারা পেয়ে যায়, পেয়ে যান রাজনৈতিক দলের স্বাধীনতা। এমন একটি দল, যেটা মুক্তিযুদ্ধের সময় কাজ করেছিল স্বাধীনতাবিরোধী হয়ে। এমনকি তিনি, বাঁ তার দল এই দুঃসাহস দেখান যে, আবদুল গনি রাজাকারকে তিনি দাবী করেন শহিদ হিশেবে, যিনি মারা গিয়েছিলেন গণহত্যার জের ধরে মুক্তিকামী মানুষের ক্রোধে।

কিন্তু মজিদ ভুলত পারে না সেই দুঃসহ স্মৃতির কথা, স্তন উপড়ে ফেলা তার বোনের লাশের কথা, যেমন আলাউদ্দিনের মা ভুলতে পারে না তাঁর ১৩ বছরের শহিদ ছেলের কথা। আবদুল গনি নামের রাজাকারকে যখন মেরে ভুলুর কংকালের সাথে বেঁধে ফেলে আসা হয় নদীতে, তখন আমরা অনুভব করি সেই রাজাকারদের প্রতি তীব্র ঘৃণার স্বরূপটি। কিন্তু আশ্চর্য, রাজনৈতিক প্যাঁচে বন্ধু শত্রু হয়ে যায়, শত্রু বন্ধু হয়ে যায় এবং মানুষ ভুলে যায়, অথবা ভুলে যায় না- লুকিয়ে রাখে। কিন্তু রক্ত দিয়ে লেখা যে স্মৃতি, তা কী আর সহজে ভোলা যায়? ভোলা যায় না। তাই মজিদ তাঁর মেয়ের নাম রাখে মোমেনা। মোমেনাকে ভুলে যাচ্ছে তার জন্যে নয়, বরং এই নামটা ভুলে যাওয়ার জন্যে নয়। মেয়ের নাম মোমেনা রাখার মধ্য দিয়ে যেন সেই দগদগে স্মৃতি না ভোলারই প্রত্যয় ব্যক্ত করেন মজিদ। এবং শেষে যখন মজিদ ইত্তেফাকে বিজ্ঞপ্তি দিয়ে মহল্লা থেকে সরে আসেন, তা যেন প্রস্থান নয়। নতুন কিছুর প্রত্যয়ে নতুন পথে যাত্রা। রক্তাক্ত স্মৃতির যে হতাশা তাড়িয়ে বেড়ায়, সেটাকে অপমানিত আর নিগৃহীত না হওয়ার প্রত্যয় নিয়ে শুরু হয় হয়তো নতুন যাত্রা, যে যাত্রায় তার অস্তিত্ব পুনর্বার ভেঙে পড়তে চায় রাজনীতির অসহায়ত্বের কারণে।

ডাউনলোড করুন বইটি

Tags: , , ,

0 Responses to “জীবন ও রাজনৈতিক বাস্তবতা - শহীদুল জহির”

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Contact

Subscribe

Donec sed odio dui. Duis mollis, est non commodo luctus, nisi erat porttitor ligula, eget lacinia odio. Duis mollis

© 2013 Ebook Craver. All rights reserved.
Designed by SpicyTricks