শুক্রবার, ১২ জুন, ২০১৫

জীবন যে রকম - আয়েশা ফয়েজ

Jibon-Je-Rokom-Ayesha-Faizহুমায়ূন আহমেদ, জাফর ইকবাল এবং আহসান হাবীব তিন জনপ্রিয় লেখকের গর্বিত জননী। মুহাম্মদ জাফর ইকবাল ও হুমায়ুন আহমেদ এর মা রত্নগর্ভা আয়েশা ফয়েজ এর লেখা জীবন যে রকম বইটি। বইটির প্রচ্ছদ যথাযথ। বাংলার অল্পবয়স্কা একজন মায়ের সাদাকালো ছবি বইটির প্রচ্ছদে স্থান পেয়েছে। তিনি তাকিয়ে আছেন, মনে হচ্ছে তিনি এ জাতিকে কিছু একটা প্রশ্ন করে বসবেন। প্রচ্ছদ উল্টালেই মুহাম্মদ জাফর ইকবাল তাঁর মাকে নিয়ে লিখলেন কয়েক কলম। মাকে নিয়ে লিখতে লিখতে জাফর ইকবাল বলে ফেললেন ১৯৭১ সালের সে দিনগুলোর কথা। মুখবন্ধে আয়শা ফয়েজ লিখলেন, ১৯৯১ সালে তিনি গিয়েছিলেন আমেরিকায় মেজো ছেলে ইকবালের বাসায়। ঠিক সেখানে বসে অনেকটা খেয়ালের বশে লিখে ফেললেন জীবন যে রকম বইয়ের পান্ডুলিপি। দেশ সেরা সন্তানদের মায়ের সে লেখাগুলো পরবর্তীতে ছাপার অক্ষরে বের হলো বই হয়ে। মা হয়েও এই বইটি প্রকাশে উদ্যোগ নেওয়ায় আয়েশা ফয়েজ তাঁর পুত্র মুহাম্মদ জাফর ইকবালকে ধন্যবাদ না জানিয়ে পারলেন না। আত্নজীবনীর শুরুতেই তিনি ১৯৪৪ সালের একজন বেকার ছেলের গল্প দিয়ে শুরু করলেন। ঠিকই মনে রেখেছেন ১৯৪৪ সালের ফেব্রুয়ারীর আট তারিখে একজন বেকার ছেলের সাথে তাঁর বিয়ে হয়েছিল। বেকার লোকটির নাম শহীদ মুক্তিযোদ্ধা ফয়েজুর রহমান। নতুন বউ হিসেবে নতুন পরিবারের দায়িত্ব্য, কর্তব্য কিভাবে পালন করলেন সবই উঠে এসেছে এই বইটিতে। গ্রামের চলমান কুসংস্কার নিয়ে সেসময়ের অনেক কথা জীবন্ত হয়ে উঠে এসেছে এই বইটিতে। আরও কিছু পৃষ্ঠা উল্টালেই পাঠক খুজে পাবেন নতুন মা হওয়ার একটি খবর। আয়েশা ফয়েজ মা হয়েছেন। যে শিশুটি এখন আমাদের হুমায়ুন আহমেদ। পোয়াতি মানুষের ভাইটামিন খাওয়ার ঘটনাটি সত্যিই হাস্যরসে ভরপুর। সে যুগে মুরুববীরা বিশ্বাস করতো পোয়াতি মানুষদের ভাইটামিন খাওয়ানো নিষেদ। ভূতের ঝাড়ু দিয়ে ঝাড়া দেবার ঘটনাও সত্যিই কৌতুকময়। বইটি পড়তে পড়তে মনে হবে এই ঘটনাটি এখনই ঘটলো বুঝি। এরপরের গল্পগুলোতে উঠে এসছে নেত্রোকনার মোহন গন্জ এর হুমায়ুন আহমেদ এর নানার বাড়ির কিছু ঘটনা। আজমীর শরীফের ফুল নিয়ে ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলোর উল্লেখ করার মতো। এতো নাটকীয় ঘটনার পর যে ছেলেটির জন্ম হলো তাঁর নাম রাখা হলো কাজল। সেই কাজল হলো আমাদের জনপ্রিয় লেখক হুমায়ুন আহমেদ। সেই কাজলের আসল নাম রাখা হয়েছিল শামসুর রহমান। কাজলের দাদা ও দাদী এই নামটি রেখেছিলেন। কিন্তু কাজলের বাবা ফয়জুর রহমান এই নামটি গ্রহন করেননি। তিনি নাম বদলে রাখলেন হুমায়ুন আহমেদ। তারপর একে একে উঠে এসেছে হুমায়ুন আহমেদ শৈশবের দুরন্তপনা, টাইফয়েড জ্বরে আক্রান্ত হওয়ার ঘটনাগুলো। হুমায়ুন আহমেদ এর বোন শেফুকে নিয়েও তিনি লিখতে ভুলে যাননি। বর্ননায় এসেছে ইকবাল, শাহীন এবং শিখুকে নিয়ে উল্লেখযোগ্য রচনা। ইকবাল কে নিয়ে নিয়ে লিখেছেন ছোটবেলা থেকেই ইকবাল ছিল পড়াশোনায় বেশ মনোযোগী কিন্তু কাজল দুষ্ট প্রকৃতির। মনিকে নিয়ে লেখাগুলোর ভেতরে রয়েছে আদর মাখানো কিছু উক্তি। যেমন মনি কথা বলতে পারে না কিন্তু সত্যিই সে ছিল মিষ্টি স্বভাবের একটি মেয়ে। তারপর ফয়েজুর রহমান এর বদলির চাকরী কারনে আয়েশা ফয়েজ ঘুরেছেন সিলেট, পচাগড়, রাঙামাটি, বান্দরবান, চট্রগ্রাম, বগুড়া, কুমিল্লা এবং অবশেষে ফিরোজপুর। ১২ নভেম্বর ১৯৭০ সাল থেকে উঠে এসেছে সেসময়ের রাজনীতির বিখ্যাত পুরুষদের কথা। শেখ মুজিব, ভাসানী, ইয়াহিয়াসহ অনেকের কথা তিনি অকপটে বলে গেছেন।

ডাউনলোড করুন

Tags:

0 Responses to “জীবন যে রকম - আয়েশা ফয়েজ”

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Contact

Subscribe

Donec sed odio dui. Duis mollis, est non commodo luctus, nisi erat porttitor ligula, eget lacinia odio. Duis mollis

© 2013 Ebook Craver. All rights reserved.
Designed by SpicyTricks