বুধবার, ২০ মে, ২০১৫
আমার দেশ আমার শতক - নীরদ চন্দ্র চৌধুরী
"জীবনের সবচেয়ে বড় ঐশ্বর্য্য মনে, বাহিরে নয়। একদিন ইতিহাসের আবর্তনে এক অপরূপ ঐশ্বর্য্য বাঙালী জীবনে আসিয়াছিল। তাহার কথা ভুলিবার নয়, তবু বাঙালীও ভুলিতেছে দেখিয়া এই বইটা লিখিয়াছি। ভালবাসাকে চিরস্থায়ী করিতে না পারিলেও ভালবাসার স্মৃতি অন্তত স্থায়ী করিতে চাই।" ----- নীরদ চন্দ্র চৌধুরী। "বঙ্কিমচন্দ্র বলিয়া গিয়াছেন, ইংরেজ আমাদিগকে অরাজকতা হইতে উদ্ধার করিয়াছেন। তাহা ছাড়া বঙ্কিম সম্বন্ধে আর একটি গল্পও আছে। তিনি যখন ডেপুটিগিরির জন্য প্রার্থী হন, তখনও সিপাহী- বিদ্রোহের জের চলিতেছে। যে পদস্থ ইংরেজ কর্মচারীর নিকট তিনি গিয়াছিলেন, তিনি তাঁহাকে এই যুদ্ধের ফলাফল সম্বন্ধে প্রশ্ন করিলেন। বঙ্কিম উত্তর দিলেন, ইংরেজের জয় সম্বন্ধে বিন্দুমাত্র দ্বিধা থাকিলে তিনি চাকুরির জন্য আসিতেন না।" "মুসলমান আধিপত্যের যুগে হিন্দু-মুসলমানের যে মিলন দেখিতে পাওয়া যায় তাহার একটা হিন্দুর দিকও আছে। তখন সাধারণ মুসলমান যেমন ষোল আনা গোঁড়া মুসলমান ছিল না সাধারণ হিন্দুও তেমনই ষোল আনা গোঁড়া হিন্দু ছিল না। এই যুগে হিন্দু সভ্যতার প্রাচীন গৌরবের কোন স্মৃতি ছিল না।সুতরাং হিন্দুর সংস্কৃতি লোপ পাইবে এই আশঙ্কা করিয়া সাধারণ হিন্দু-মুসলমানেরর আচার,ভাষা, পোশাকপরিচ্ছদ, এমন কি ধর্মবিশ্বাসও গ্রহন করিতে সঙ্কোচ বোধ করিত না। এই কারণেই তখন দুই সম্প্রদায়ের সাধারণ লোকের মধ্যে সৌহার্দ্য থাকাই স্বাভাবিক বলিয়া মনে করিতে হইবে। বিবাদ হইলেই বরঞ্চ আশ্চর্য হইবার কথা।" "যে কারণে ঊনবিংশ শতাব্দীতে ভারতবর্ষের হিন্দুরা পূর্বাপেক্ষা অনেক বেশী হিন্দুভাবাপন্ন হইয়া উঠেন, ঠিক সেই কারণে মুসলমানরাও এই যুগে অনেক বেশী ইসলামীভাবাপন্ন হইয়া পড়েন।" 'দাই হ্যান্ড গেট অ্যানার্ক' এবং টেলিগ্রাফে তাঁর ইংরেজদের তিরস্কার-করা প্রবন্ধ পড়ে দ্য নিউ ইয়র্ক রিভিউ-তে আয়ান বুরুম লিখেছেন : সত্তর বছর আগে বাংলায় চৌধুরী অপমান বোধ করেছিলেন, কারণ কতগুলি আত্মম্ভরী ইংরেজ তাচ্ছিল্যের হাসি হেসেছিল ব্রিটিশ সংস্কৃতিতে তাদের চেয়ে তাঁর গভীরতর জ্ঞান দেখে।
0 Responses to “আমার দেশ আমার শতক - নীরদ চন্দ্র চৌধুরী”
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন