মঙ্গলবার, ২৩ জুন, ২০১৫

বিষাদ-সিন্ধু - মীর মশাররফ হোসেন

IMG_0002_1বিষাদ-সিন্ধু কারবালার যুদ্ধক্ষেত্রকে উপাত্ত করে রচিত মীর মশাররফ হোসেনের ঐতিহাসিক উপন্যাস। এটি যথাক্রমে ১৮৮৫, ১৮৮৭ ও ১৮৯১ সালে তিন ভাগে প্রকাশিত হয়; পরবর্তীতে সেগুলি একখন্ডে মুদ্রিত হয়।

বিষাদ-সিন্ধুর প্রধান চরিত্রগুলো নামের দিক থেকে ঐতিহাসিক, কিন্তু ঘটনা বর্ণনায় ও চরিত্র সৃষ্টিতে কাল্পনিক। এই গ্রন্থে কিছু উপকাহিনী আছে, যেগুলো যথার্থ ঐতিহাসিক নয়। গ্রন্থের মুখবন্ধে লেখক মীর মশাররফ হোসেন লিখেছেন- ‘পারস্য ও আরব্য গ্রন্থ হইতে মূল ঘটনার সারাংশ লইয়া বিষাদ-সিন্ধু বিরচিত হইল।’ লক্ষণীয় বিষয়, মীর মশাররফ হোসেন বিষাদ-সিন্ধু গ্রন্থে বর্ণিত ঘটনাসমূহ কোন কোন আরবি এবং ফারসি গ্রন্থ হতে সংগ্রহ করেছেন তার নাম উল্লেখ করেননি। এ কারণে ‘সমালোচকবৃন্দ’ লেখকের ‘বক্তব্য অনুমোদনে দ্বিধান্বিত’। মুনীর চৌধুরী লেখকের দাবী সম্পর্কে যৌক্তিক সংশয় পোষণ করেছেন। তিনি দোভাষী পুঁথির সঙ্গে বিষাদ-সিন্ধুর বেশ সাদৃশ্য আবিষ্কার করে নিশ্চিন্ত হয়েছেন যে মশাররফের অবলম্বন ছিল কারবালাবিষয়ক জনপ্রিয় বাংলা পুঁথিই। গোলাম সাকলায়েনের অভিমতও অভিন্ন। আনিসুজ্জামান ও মুস্তাফা নূরউল ইসলামও মনে করেন দোভাষী পুঁথিই মশাররফের কাহিনীর প্রধান প্রেরণা ও মূল উৎস। কাজী আবদুল মান্নান অনুমান করেছেন, ‘গ্রন্থটির প্রতি ধর্মপ্রাণ মুসলমান সমাজের শ্রদ্ধা এবং আকর্ষণ সৃষ্টির জন্যই মশাররফ কাহিনী-উৎসের প্রশ্নে আরবি-ফারসি গ্রন্থেও প্রসঙ্গটি উত্থাপন করেন।

মীর মশাররফ হোসেনের বিষাদ-সিন্ধুর মূল বিষয়বস্ত্ত হচ্ছে- হযরত মুহাম্মদ (সা.)-এর প্রিয় দৌহিত্র ইমাম হোসেনের মৃত্যুর জন্য দায়ী ঘটনাসমূহ। অবশ্য ইমাম হোসেনের মৃত্যুর ফলে যে সকল ঘটনা ঘটেছিল তারও বর্ণনা রয়েছে এ গ্রন্থে। বিষাদ-সিন্ধু উপন্যাসের প্রধান চরিত্রগুলির সন্ধান ইতিহাসে পাওয়া যায়, কিন্তু কোনো কোনো অপ্রধান চরিত্রের উল্লেখ বা সন্ধান ঐতিহাসিক কোনো গ্রন্থে পাওয়া যায় না। কিন্তু গবেষকের সিদ্ধান্ত- ‘যেহেতু ইতিহাসের ওপর ভিত্তি করেই এই গ্রন্থ রচিত হয়েছে, সুতরাং এটিকে ঐতিহাসিক উপন্যাস বলা যায়।’ এতে একই সঙ্গে উপন্যাসের চরিত্রচিত্রণ, মানবজীবনের দুঃখ-যন্ত্রণা, হিংসা-বিদ্বেষ ইত্যাদি যেমন চিত্রিত হয়েছে তেমনি ইতিহাসের পটভূমিকায় সিংহাসন নিয়ে দ্বন্দ্ব, সংগ্রাম, রক্তপাত, হত্যাকান্ড ইত্যাদি বর্ণিত হয়েছে। সারকথা বিষাদ-সিন্ধুতে বর্ণিত ইতিহাসের চরিত্র ও ইতিহাসের লক্ষণকে প্রত্যক্ষ করে গবেষক একে ঐতিহাসিক উপন্যাসের মর্যাদা দিতে দ্বিধা করেননি। তবে এতে এমন কিছু ঘটনার উল্লেখ আছে যেগুলো ইতিহাসের আলোকে বিচার করা চলে না। এমনকি বাস্তব জীবনেও সেগুলির অস্তিত্ব সম্পর্কে সন্দেহ পোষণ করা চলে, যেমন-কিছু অতিপ্রাকৃত ঘটনা, এগুলির কোনোটির উৎপত্তি ধর্মীয় বিশ্বাসে, আবার কোনটির উৎপত্তি ঐন্দ্রজালিক শক্তিতে ও আস্থায়।

ডাউনলোড করুন বইটি

Tags: ,

0 Responses to “বিষাদ-সিন্ধু - মীর মশাররফ হোসেন”

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Contact

Subscribe

Donec sed odio dui. Duis mollis, est non commodo luctus, nisi erat porttitor ligula, eget lacinia odio. Duis mollis

© 2013 Ebook Craver. All rights reserved.
Designed by SpicyTricks