বুধবার, ৩০ মার্চ, ২০১৬
দি এক্সরসিস্ট - পিটার ব্লেটি (অনুবাদ- হুমায়ুন আহমেদ)
লজিক আর অ্যান্টি লজিকের দোলাচলের মধ্য দিয়ে এগোতে থাকা এক পিশাচ কাহিনী।
এক বিখ্যাত মার্কিন অভিনেত্রী ক্রিসের মেয়ে রেগান। বয়স এগারো। হঠাৎ করে তার মধ্যে অস্বাভাবিক পরিবর্তন দেখা দিতে লাগল। প্রথমদিকে যে এক কাল্পনিক চরিত্রের সাথে একা একা কথা বলত। কিছুদিন পর অস্বাভাবিকতার মাত্রা বাড়ল। মানসিকভাবে সে একাবারেই ভারসাম্যহীন হয়ে পড়ল। তার ঘরেও যেন কিছু একটা আছে যেজন্য ঘর সবসময় শীতল হয়ে থাকে। রাতে ঘুমের মধ্যে তার খাট কাঁপে। ক্রিস তার মেয়েকে ডাক্তার দেখাল। ডাক্তারেরা রেগানের শারীরিক সবধরনের সম্ভাব্য রোগ বিশ্লেষণ করলেন। পাওয়া গেল না কিছুই। সাইক্রিয়াটিস্টের শরণাপন্ন হয়েও লাভ হল না কোন। ওদিকে ক্রিসের বাড়িতে এক সন্ধ্যায় খুন হয়ে গেল এক চলচ্চিত্র পরিচালক। আপাতদৃষ্টিতে মনে হয়, মানসিক ভারসাম্যহীন রেগানের হাতেই খুনটা হয়েছে। কিন্তু রেগানের সমস্যাটা কি? শারীরিক বা মানসিক সমস্যা না থাকার মানে তো তার ওপর শয়তান আছর করেছে। শয়তানের হাত থেকে বাঁচতে তার দরকার এক্সরসিজম বা তার ওপর গুণ করা। এক নাস্তিক পাদ্রী কারাস যে কিনা একজন মনোবিদও, অস্বীকৃতি জানাল এক্সরসিজম করতে। সে নতুন করে বৈজ্ঞানিকভাবে বের করার চেষ্টা করতে লাগল রেগানের সমস্যার সমাধান। বিভিন্ন থিওরিও দাঁড় করাল। কিন্তু শেষ অব্দি কি রেগানের সমস্যাটাকে যুক্তি দিয়ে বিচার করা যাবে নাকি এক্সরসিজমই করতে হবে? শেষে রেগান আর কারাসের পরিণতিই বা হবে? কাহিনীর শেষে কি নতুন করে আবির্ভাব হবে কারো? এসবের উত্তর পাওয়া যাবে এক্সরসিজম উপন্যাসে।
এটি মূলত পিটার ব্লেটির পিশাচ কাহিনীর হুমায়ুন আহমেদ কর্তৃক ভাবানুবাদ। প্রথমেই বলতে হবে, অনুবাদটি হয়েছে সর্বোচ্চমানের। হুমায়ুন আহমেদ যদি সাহিত্যের এই শাখার সাথে নিয়মিতভাবে জড়িত থাকতেন, তবে এদেশের অনুবাদশিল্প যে এতদিনে অনেকদূর এগিয়ে যেত তা বলাই বাহুল্য। যাইহোক, এবার 'দি এক্সরসিস্ট' এর মূল কাহিনী নিয়ে কথা বলি। অনেকেই হুমায়ুন আহমেদের মিসির আলী বিষয়ক রচনাগুলোর সাথে মিল পাবেন এই উপন্যাসের। মূলত 'দি এক্সরসিস্ট' এর অনুবাদের অভিজ্ঞতাই কিন্তু হুমায়ুন আহমেদকে অনুপ্রাণিত করেছিল এইধরণের আদিভৌতিক বিষয়কে যুক্তিসঙ্গতভাবে মিসির আলী সিরিজের মাধ্যমে তুলে ধরতে। মিসির আলীর রচনায় যেমন লজিক আর অ্যান্টি লজিক বিশেষ জায়গা পেয়েছে, তেমন এই উপন্যাসেও কিন্তু লজিক আর অ্যান্টি লজিকের পরস্পর বিরোধিতা এবং এ বিষয়ে কারাস চরিত্রের মাধ্যমে সিদ্ধান্তহীনতার দোলাচল ফুটে উঠেছে। কারাস চরিত্রটি একেবারে মিসির আলীর মত করেই ভৌতিক বিষয়গুলোর বৈজ্ঞানিক ও যুক্তিসঙ্গত ব্যাখ্যা প্রদানের চেষ্টা করেছে, যদিও কারাস চরিত্রের জন্ম আসলে মিসির আলীর আগেই। এ থেকেও পাঠক নিজেরা একটি সিদ্ধান্তে আসতে পারেন। সে ব্যাপারে আমি নতুন করে কিছু নাই বা বললাম। কিন্তু এ কথা অনস্বীকার্য যে, হুমায়ুন আহমেদ নিজে যেমন আকর্ষিত হয়েছিলেন নাস্তিক পাদ্রী কারাসের চরিত্রের ব্যাপারে, তেমন অন্য পাঠকেরাও এই চরিত্রটিকে পছন্দ করবে। পাশাপাশি পুলিশ ইনভেস্টিগেটর মিঃ কিণ্ডারম্যানের চরিত্রটিও বেশ মনোমুগ্ধকর। তবে সার্বিকভাবে 'দি এক্সরসিস্ট' এর ফিনিশিং নিয়ে আমি সন্তুষ্ট হতে পারি নাই। একটি যুক্তিবাদী ফিনিশিং আশা করছিলাম কিন্তু বাস্তবে দেখা মিলল তার সম্পূর্ণ বিপরীত ফলাফলের। তাই তো এই 'দি এক্সরসিস্ট' এর জনরা হিসেবে বেছে নিতে হচ্ছে 'ভৌতিক' বা 'আদিভৌতিক'।
Download
Tags: অনুবাদ উপন্যাস , ক্লাসিক , ভৌতিক গল্প ও উপন্যাস , হুমায়ূন আহমেদ
0 Responses to “দি এক্সরসিস্ট - পিটার ব্লেটি (অনুবাদ- হুমায়ুন আহমেদ)”
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন