মঙ্গলবার, ২৩ জুন, ২০১৫
মুনশী আবদুল করিম সাহিত্যবিশারদ ও আত্মসত্তার রাজনীতি
আবদুল করিম সাহিত্য বিশারদ পুথির কঙ্কালের ভেতর যুগযুগান্তরের রক্তধমনী ও নিঃশ্বাসের প্রবাহধ্বনি শুনেছিলেন। সারা জীবন তিনি বিশ্বাস করে এসেছেন সেই এক হারানো যুগের ‘শিল্পস্রষ্টাদের পক্ষে যাহা সত্য ছিল’, আজ এই যন্ত্রের যুগেও ‘তাহার বিশেষ ব্যতিক্রম ঘটে নাই।... তাহার আস্বাদ যুগযুগান্তর অতিক্রম করিয়া আজও অবিকৃত অম্লান রহিয়াছে।’
বর্তমান গ্রন্থটি অবশ্য ‘মুনশি আবদুল করিম সাহিত্য বিশারদের দান ও সাধনা নিয়ে নিছক বিবরণী’ নয়, বরং ভারতীয় ভাষা-সংস্কৃতি-ঐতিহ্য নিয়ে ঔপনিবেশিক বিজয়সূত্রে পশ্চিমের পণ্ডিতদের নৃতাত্ত্বিক ‘ভারতবিদ্যাগত’ আগ্রহ কিভাবে সংস্কৃতাশ্রয়ী পুথিসন্ধান ছাপিয়ে নানা আঞ্চলিক ভাষা পর্যন্ত অগ্রসর হল, যদিও সেই প্রকল্পে বঙ্কিমচন্দ্র চট্টপাধ্যায় এর ভাষায় ‘সাম্যের অভাব আছে’ .. সেই সন্ধানই কিভাবে অনতিবিলম্বে সাহেব ও দেশী পণ্ডিতদের মাঝে চাপান-উতোরের ক্ষেত্র হয়ে উঠল, লোকজ ঐতিহ্য লালিত দেশীয় গবেষকদের সাথে বিদগ্ধ বিজ্ঞানসম্মত গবেষকদের বৈপরিত্যও স্পষ্টতর হতে থাকল;- সাহিত্য বিশারদ ও তাঁর সাধনাকে সেই প্রেক্ষিতেই পুনরাবিষ্কার করেছেন গৌতম ভদ্র।
গৌতম ভদ্র জ্ঞানায়তনের সেই ক্ষেত্রের মানুষ, কর্তার নিজস্ব চৈতন্যের মূল্য যেখানে সবিশেষ। দীনেশচন্দ্র সেন ও মুনশী আবদুল করিম সাহিত্য বিশারদ, যারা পুথি পাঠকারী সমাজের অনুভূতি ও অভ্যাসের সাথে পরিচিত শুধু নন, মননের দিক থেকেও সেই সমাজের অঙ্গীভূত; তাদের সাথে নগেন্দ্রনাশ বসু ও আহমদ শরীফ এর নির্মোহ, বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিসম্মত গবেষণার পাঠের ফারাক তাই গৌতম ভদ্রের কাছে তাই ভিন্ন এক অর্থ ধারন করে।
0 Responses to “মুনশী আবদুল করিম সাহিত্যবিশারদ ও আত্মসত্তার রাজনীতি”
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন