শুক্রবার, ২৬ জুন, ২০১৫

বিবর্তনমূলক বাংলা অভিধান - গোলাম মুরশিদ(১ম খন্ড)

bangla-bhashar-bibartanmulak-abhidhanপ্রায় সোয়া লাখ শব্দের সংযোজন করে প্রকাশিত হয়েছে বিবর্তনমূলক বাংলা অভিধান নামের তিন খণ্ডের বই। শব্দের কী রূপ? শব্দের খেলা কেমন, কারা তার খেলোয়াড়, এর শেষ আছে কিনা এরকম প্রশ্নেরই উত্তর মিলছে অভিধানটিতে। বাংলা একাডেমি থেকে প্রকাশিত অভিধানটি সম্পাদনা করেছেন শিক্ষাবিদ ও গবেষক অধ্যাপক ড. গোলাম মুরশিদ। বলা যায়, এটিই বাংলা ভাষায় রচিত সবচেয়ে বড় অভিধান। অভিধানের প্রথম খণ্ডে সব মিলে ৪০ হাজার ৮০৪ টি শব্দের অর্থ, ব্যাখ্যা দেয়া হয়েছে। এতে প্রয়োগবাক্য রয়েছে ৫৬ হাজার ৬১০টি। তিন খণ্ড মিলে প্রায় সোয়া লাখ শব্দ ঠাঁই পেয়েছে এই অভিধানে। এই সোয়া লাখ শব্দ সবই ১৯৭২/৭৩ সালের আগ পর্যন্ত। অভিধানটিতে প্রায় তিন হাজারের মতো পৃষ্ঠা রয়েছে । প্রতি খণ্ডের মূল্য ১ হাজার টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। তবে মেলা উপলক্ষে ৩০% কমিশনে অভিধানটি বিক্রি করছে বাংলা একাডেমি কর্তৃপক্ষ। রামচন্দ্র বিদ্যাবাগীশ রচিত প্রথম বাংলা অভিধান প্রকাশিত হয়েছিল প্রায় দু’শ বছর আগে। ১৮১৭ সালে তিনি বাংলা অভিধান রচনা করেন। এরপর অনেক পণ্ডিতই অভিধান রচনা করেছেন। তবে বাংলা ভাষায় রচিত অভিধানগুলোর বৈশিষ্ট্যের ভিন্নতা নেই বললেই চলে। এই অভিধানগুলোতে প্রচলিত-অপ্রচলিত শব্দের এক বা একাধিক অর্থ এবং পদ পরিচয় দেয়া হয়েছে মাত্র। আবার কোনোটিতে শব্দগুলোর ব্যুৎপত্তিও দেয়া আছে। কিন্তু শব্দের ঐতিহাসিক ব্যাখ্যা, কে, কখন, কোন অর্থে ব্যবহার করেছেন তার কোনো হদিস মেলে না বাংলা ভাষায় রচিত অভিধানগুলোতে। বিবর্তনমূলক বাংলা অভিধান-এ শব্দের ঐতিহাসিক ব্যাখ্যা মিলবে। ১৪৫০ সালে শ্রীকৃষ্ণকীর্তনে শব্দের কী অর্থ ছিল আর তা রবীন্দ্রনাথের হাতে পড়ে কী অর্থ দাঁড়িয়েছে, তার বিবর্তনমূলক ব্যাখ্যা দেয়া হয়েছে অভিধানটিতে। অক্সফোর্ড অভিধানের মতো কলবরে না হলেও মডেল হিসেবে অক্সফোর্ড অভিধানটিকেই আমলে নিয়ে রচনা করা হয়েছে বিবর্তনমূলক বাংলা অভিধান। অক্সফোর্ড অভিধানে শব্দগুলোর ব্যুৎপত্তি এবং প্রথম ব্যবহারের তারিখ এবং দৃষ্টান্ত দেয়া আছে। এ ছাড়া সময়ের ব্যবধানে শব্দের রূপান্তরের ব্যাখ্যাও দেয়া হয়েছে অক্সফোর্ড অভিধানে। অক্সফোর্ড-এর এই নীতি অনুসরণ করে শব্দের অর্থ-পরিচয় তুলে ধরেছেন বিবর্তনমূলক বাংলা অভিধান-এর সম্পাদক গোলাম মুরশিদ। অক্সফোর্ড অভিধান রচনা করতে সময় লাগে ৪৯ বছর। ১৮৭৯ সালে শুরু হয়ে ১৯২৮ সালে শেষ হয় অক্সফোর্ড অভিধানের প্রথম সংস্করণ। জেমস মারের নেতৃত্বে বিশাল এক সম্পাদনাকর্মী গোষ্ঠী অক্সফোর্ড অভিধানের সম্পাদনা করেন। কিন্তু আজও সম্পাদনা হচ্ছে অক্সফোর্ড অভিধানটি। এখনও নতুন শব্দ অন্তর্ভুক্ত হচ্ছে অভিধানটিতে। সুতরাং বিবর্তনমূলক বাংলা অভিধান-এর প্রথম সংস্করণকে সূচনালগ্নই বলা যেতে পারে। একই অর্থে অপূর্ণও বটে। সোয়া লাখ শব্দের ভাণ্ডার নিয়ে রচিত অভিধানটি সময়ের ব্যবধানে আরও সমৃদ্ধ হবে বলে সম্পাদক গোলাম মুরশিদ অভিব্যক্তি প্রকাশ করেন। অনেক দিনের পুঞ্জীভূত ভাবনা নিয়ে বিবর্তনমূলক একটি অভিধান রচনা করবেন বলে বেশ কয়েক বছর আগে বাংলা একাডেমিতে সাক্ষাৎ করেন লেখক, গবেষক গোলাম মুরশিদ। ২০১০ সালের শেষ দিকের কথা। বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক বিষয়বস্তুর ব্যাপারে অবগত হয়ে প্রথম সাক্ষাতেই সম্মতি জ্ঞাপন করেন। এরপর অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিতের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে একটি বাজেটও করিয়ে নেন মহাপরিচালক শামসুজ্জামান খান। ২০১১ সালের ১ জানুয়ারি থেকেই যাত্রা শুরু হয় বিবর্তনমূলক বাংলা অভিধানের রচনা কাজের। শুরু থেকেই দশ জনের একটি তরুণ সম্পাদনা গোষ্ঠী অক্লান্ত শ্রম আর নিষ্ঠার পরিচয় দিতে থাকেন। বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণের একটি ভবনে চলে সম্পাদনার কাজ। ভবনটির সম্পাদনা কক্ষে সংযুক্ত করা হয় অত্যাধুনিক প্রযুক্তি। সম্পাদক গোলাম মুরশিদ বেশিরভাগ সময় দেশের বাইরে থাকার কারণেই প্রযুক্তির এই সংযোজন। তিনি সুদূর লন্ডনে বসে স্কাইপের মাধ্যমে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখতেন সম্পাদনা টিমের সঙ্গে। সহযোগী সম্পাদক স্বরোচিষ সরকার এবং সমন্বয়ক মুহম্মদ সাইফুল ইসলামের সার্বিক তত্ত্বাবধায়নে মাত্র তিন বছরের ব্যবধানে তরুণ এই সংকলকেরা পাঠকের হাতে বিশালাকৃতির অভিধান গ্রন্থটি তুলে দিতে সক্ষম হন। অভিধানটি শুধু বাংলাদেশের অধিবাসীদের জন্যই নয়, সমগ্র বিশ্বের বাংলা ভাষাভাষীদের জন্য রচিত বলেই সম্পাদকমণ্ডলী মনে করছেন। এপার বাংলা ওপার বাংলায় একইভাবে সমাদৃত হবে বলে তাদের আশাবাদ। কোনো বিশেষ গোষ্ঠী, ধর্ম বা সম্প্রদায়ের ভাষাকে প্রাধান্য দিয়ে নয়, বরং শব্দ নির্বাচনের ক্ষেত্রে সার্বজনীনতা বজায় রাখা হয়েছে। একাডেমিকভাবেও অভিধানটির উচ্চতর গ্রহণযোগ্যতা থাকবে বলে মনে করা হচ্ছে। অভিধানটি পশ্চিমবঙ্গের লেখক-গবেষক এবং পাঠকের মাঝে ব্যাপক সাড়া জাগিয়েছে। অভিধানটি প্রকাশ হওয়ার আগেই কলকাতার আনন্দবাজার পত্রিকা দু’বার ফলাও করে খবর ছাপিয়েছে। উপ-সম্পাদকীয়ও প্রকাশ করেছে পত্রিকাটি। অভিধানটির ওপর দেশ পত্রিকায় বিশেষ নিবন্ধ প্রকাশ করা হয়েছে। বাংলাদেশের পাঠকের মাঝেও বইটি নিয়ে ব্যাপক উৎসাহ দেখা যাচ্ছে বলে মেলার আয়োজক সূত্রে জানা গেছে। বাংলা একাডেমি কর্তৃপক্ষ সাপ্তাহিককে জানায়, প্রতিদিনই অভিধানটির বিক্রির পরিমাণ বাড়ছে। সুতরাং বলা যেতেই পারে এবারের বইমেলায় বিশেষ সংযোজন বিবর্তনমূলক বাংলা অভিধান, যা বাংলা ভাষাকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিতে অধিক সহায়ক ভূমিকা রাখবে। সহযোগী সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশ স্টাডিজ (আইবিএস)-এর শিক্ষক অধ্যাপক ড. স্বরোচিষ সরকার। বাংলা একাডেমির সহ-পরিচালক ড. মুহম্মদ সাইফুল ইসলামের সমন্বয়ে অভিধানটির সংকলক ছিলেন আসিফ আজিজ, কল্পনা ভৌমিক, জামাল উদ্দিন জাহেদি, ফারহান ইশরাক, মতিন রায়হান, মাহফুজা হিলালী, মো. আমিরুল ইসলাম, মো. মাইনুল ইসলাম, রাজীব কুমার সাহা, শামস্ নূর। এই অভিধান প্রকল্পের বাস্তবায়ক শামসুজ্জামান খান। কর্মসূচী পরিচালক শাহিদা খাতুন।

ডাউনলোড করুন বইটি

Tags: ,

0 Responses to “বিবর্তনমূলক বাংলা অভিধান - গোলাম মুরশিদ(১ম খন্ড)”

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Contact

Subscribe

Donec sed odio dui. Duis mollis, est non commodo luctus, nisi erat porttitor ligula, eget lacinia odio. Duis mollis

© 2013 Ebook Craver. All rights reserved.
Designed by SpicyTricks