বুধবার, ৩০ মার্চ, ২০১৬
নিকুন্তিলা - নাসরীন জাহান
মূলত মা ও মেয়ের কাহিনী নিয়ে বেড়ে উঠেছে নিকুন্তিলা উপন্যাস। শৈশব থেকে মা-কে জীবনের নানা সহজ, দুর্মর প্রশ্ন করে বড়ো হতে থাকা 'নিকুন্তিলা' নামের মেয়েটি হঠাৎ হঠাৎ মা-কে থামিয়ে দিয়েছে এমন সব প্রশ্নের ফাঁদ-আটকে_ আপাতঃ দৃষ্টিতে যা অশ্লীল অথবা অন্ধকারময়। কিন্তু মা ফের গড়িয়ে চলেছেন, এক অসীম স্তব্ধ বেদনার ভার বুকে চেপে হাস্যরত মা কখনো ক্রন্দনরত, অপার রহস্যের আড়ালে বিমুঢ়। অন্যের কাছে যা বিষ, তা-ই প্রায়শ নিকুন্তিলার মা-র কাছে জল। মেয়ের সামনে জীবনের কোন বিষয়ই সময়ের ধাপে ধাপে আড়াল করার প্রয়োজনবোধ করেন নি তিনি। বরং নিকুন্তিলার কৌতূহলকে সম্মান করে তার জীবনকে গড়ে তুলেছেন এমন এক বিশ্বাসে, যেখানে প্রচলিত পাপের রূপ পাল্টে পুন্যে পর্যন্ত রূপান্তরিত হয়ে উঠতে পারে। মা-ও নিকুন্তিলার কাছ থেকে সেইসব পথ পরিক্রমার নানা পর্যায়ে শিখেছেন অনেক। নিকুন্তিলার স্থির কঠিন ব্যাক্তিত্বের সামনে এলোমেলো জীবন নিয়ে থমকে দাঁড়িয়েছেন। এই ক্ষেত্রে মা নিতু এবং নিকুন্তিলা-নিকু, যেন মা আর কন্যা নয়, একই ভ্রূণ থেকে জন্ম নেয়া যমজ সহোদরা। সচাইতে নিকটতম বন্ধু। বাবা মা'র সুখী দাম্পত্য জীবনের সোনালী জলের তরঙ্গের আর্দ্রে বেড়ে উঠা নিকুন্তিলা বয়ঃসন্ধি ক্ষণে এক ভয়াবহ কঠিন এবং যন্ত্রণাময় অধ্যায়ের সামনে দাঁড়ায় মা-র জীবনের আড়ালে দীর্ঘ বছর লুকিয়ে থাকা 'জুবায়ের' নামের এক বিশাল ব্যাক্তিত্বের আবিস্কারে। শুরু হয় নতুন পাঠ। মাথার ওপর পাক খায় ঝুলন্ত কুয়াশারা। এ-ই মা, সনাতন মা নয়, নিকুন্তিলাও নয় সনতন কন্যা। মা এবং নিকুন্তিলা একই সাথে বেড়ে উঠতে থাকে। অন্যান্য প্রধান চরিত্ররা-ও তাদের বিচিত্র বোধের সাথে ডানা- পা অথবা শাখা প্রশাখা বিস্তার করে এক ছকবন্দী, অথবা ভিন্নস্রোতের পরিণতির দিকে এগিয়ে যায়।
0 Responses to “নিকুন্তিলা - নাসরীন জাহান”
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন