বৃহস্পতিবার, ৩১ মার্চ, ২০১৬
আমার আমি - উত্তম কুমার
উত্তম কুমারের আসল নাম অবশ্য অরুণ কুমার চ্যাটার্জী। উত্তম কুমার তাঁর ফিল্মি নাম। অবশ্য স্বনামে তিনি কয়েকটি সিনেমায় অভিনয় করেছিলেন। উত্তমের প্রথম মুক্তিপ্রাপ্ত সিনেমা ‘দৃষ্টিদান’। অবশ্য এর আগে উত্তম ‘মায়াডোর’ নামে একটি সিনেমাতে অভিনয় করলেও তা মুক্তি পায়নি। তবে ‘বসু পরিবার’ সিনেমাতে প্রথম সাধারণ মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন তিনি। তবে দারুল জনপ্রিয় হয়ে উঠেন সুচিত্রা সেনের বিপরীতে ‘সাড়ে চুয়াত্তু—র’ সিনেমায় অভিনয়ের মাধ্যমে। এর পরেই গড়ে ওঠে বাংলা সিনেমার সর্বকালের জনপ্রিয় এবং রোমান্টিক জুটি উত্তম-সুচিত্রা জুটি। বাংলা সিনেমায় পঞ্চাশ এবং ষাটের দশকে অনেক ব্যবসা সফল এবং জনপ্রিয় চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছিলেন উত্তম কুমার আর সুচিত্রা সেন। এগুলোর মধ্যে হারানো সুর, পথে হলো দেরী, সপ্তপদী, চাওয়া পাওয়া, বিপাশা, সাগরিকা ইত্যাদি। বাজারে জোর গুজব ছিল দুজনে চুটিয়ে প্রেম করছেন। অবশ্য সে কথা স্বীকার করেননি কেউই। আজন্ম ছিলেন বন্ধু। সিনেমায় অভিনয়ের আগ থেকেই সুচিত্রা ছিলেন বিবাহিত। এক হারা গড়ন, সদা হাস্যময়, তীক্ষè ব্যক্তিত্বসম্পন্ন উত্তম কুমারের অভিনয় আর ব্যক্তিত্বের আকর্ষণ এড়ানো ছিল সত্যিই কঠিন।
উত্তম কুমার বহু সফল বাংলা সিনেমার পাশাপাশি বেশ কিছু হিন্দী সিনেমায় নজরকাড়া অভিনয় করেন। এর মধ্যে ‘ছোটিসি মূলাকাত’ ‘অমানুষ’ ‘আনন্দআশ্রম’ অন্যতম। তিনি বিখ্যাত চিত্র পরিচালক সত্যজিৎ রায়ের ‘নায়ক’ এবং ‘চিড়িয়াখানা’ চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছিলেন। সত্যজিৎ রায়ের পরিচালনার ‘নায়ক’ সিনেমার উত্তমকে কুমারকে বাঙালি মনে রাখবে আরও অনেকদিন। নায়ক সিনেমায় অভিনয় করে তিনি জিতে নেন ‘ভারতরতœ’ পুরস্কার। ‘হারানো সুর’ সিনেমার জন্য পেয়েছিলেন রাষ্ট্রপতির সার্টিফিকেট অব মেরিট পুরস্কার। তবে এত পুরস্কার আর সম্মাননার পরও ব্যক্তি উত্তম ছিলেন একবারেই সাধারণ মানুষ।
দুস্থ শিল্পীদের কল্যাণে নিজে তৈরি করেছিলেন আর্থিক ফান্ড। দু’হাতে দান করেছেন মানুষকে। বাংলাদেশের প্রতি খুবই সহানুভূতিশীল ছিলেন উত্তম কুমার। ১৯৭১ সালের বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে গোপনে অর্থ সাহায্য করেছিলেন। সেজন্য অবশ্য তাকে কম ঝক্কি পোহাতে হয়নি। নকশাল ছেলেরা গিয়ে তাকে ধমকে এসেছিল। তাদের আচরণে কষ্ট পেয়েছিলেন অনেক। ফলে মাস কয়েকের জন্য মুম্বাই চলে গিয়েছিলেন তিনি। এরপর আবার ফিরে আসেন কলকাতায়। ১৯৮০ সালের আগস্টে ‘ওগো বধূ সুন্দরী’ সিনেমার সেটে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েন তিনি। দ্রুত হাসপাতালে নেয়া হয় তাকে। কিন্তু সবাইকে কাঁদিয়ে ১৯৮০ সালের ২৪ আগস্ট কলকাতায় মৃত্যুবরণ করেন এই গুণী অভিনেতা। তবে এই নশ্বর পৃথিবী থেকে ব্যক্তি উত্তম কুমার বিদায় নিলেও সেলুলয়েডের উত্তম কুমার বেঁচে থাকবেন প্রতিটি বাঙালির হৃদয়ে।
0 Responses to “আমার আমি - উত্তম কুমার”
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন